মৌলভীবাজারে গেল বছর জুড়ে ধানের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ব্যাপকভাবে বোরো আবাদে নেমেছেন কৃষকরা। বোরো চাষাবাদকে ঘিরে মাঠে মাঠে চলছে চারা রোপনের শেষ পর্যায়ের কাজ। কৃষি বিভাগ বলছে এ বছর বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকরা দাবী করছেন ধানের ন্যায্য মূল্যের।
৮ ফেব্রয়ারি দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কুমার দত্ত, স্থানীয় কৃষক ও রাইস ট্রান্সপ্লাটার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন, উপ সহকারী কৃষি অফিসার নিরোজ কান্তি রায়।
মৌলভীবাজারে বসবাসকারীদের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার একমাত্র উপায় কৃষিকাজ। আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিক নির্ভর হয়ে পূর্ব পুরুষের এই পেশাকে ধরে রেখে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন কৃষি নির্ভর মানুষ। উৎপাদিত ফসলের কাঙ্খিত দাম পাওয়া না পাওয়ার উপরই নির্ভর করে তাদের ভাল ও মন্দ থাকা। গেল বছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছরও অনেকেই আগের চেয়ে বেশী জমি আবাদ করছেন। স্থানীয় কৃষকদের প্রত্যাশা স্থায়ী সেচ ব্যবস্থা ও ধানের নায্য দাম পাওয়া।
স্থানীয় কৃষক ও খামারী সৈয়দ উমেদ আলী শাহীন জানান, গত বছর ৪০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। ভালো ফলন ও ধানের দাম পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে ৮০ বিঘা (কেয়ার) জমিতে ব্রি ধান ৮৯, ৯২ ও হাইব্রিড জাতের ধানীগোল্ড, সিনজেন্টার ১২০৩ ধান চাষ করেছেন। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ২০-৩০ দিনের চারা রোপন করছেন। এতে করে শ্রমিক কম লাগায় উৎপাদন খরচ কমে যাবে। অবশিষ্ট জমিতে পূর্বের পদ্ধতিতে হাতে চারা রোপন করছেন।
কৃষক সেফুল আহমদ শিমুল জানান, গত বছর ১০ বিঘা জমি চাষ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে। সরকারি গুদামে ১০ হাজার ৮০ টাকা মূল্যে কিছু ধান দিয়েছেন। এবছর ১১ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের চারা লাগাচ্ছেন। বর্তমানে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেচ দিতে তাদের খরছ বেশী লাগছে। কৃষক রক্ষা করতে হলে ধানের মূল্য নূন্যতম ১২‘শ টাকা হওয়া দরকার।
কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় গেল আমন চাষাবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৪শ ২৫ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন চাল। ২০২১-২২ অর্থবছরের সমন্নিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে জেলায় বরাদ্দ আসে ১৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দেয়া হয়। সব মিলিয়ে ৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার জেলায় রয়েছে, নতুন ভাবে দেয়া হয়েছে ৩টি রাইস ট্রান্সপ্লাটার। এছাড়া জেলায় রয়েছে ১৯টি রিপার, ১৫টি ধান মারাই যন্ত্র ও ১টি ভুট্রা মারাই যন্ত্র।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ৫৬ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৩৭৭ হেক্টর বেশী। ৯০ ভাগ চারা রোপন কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আশা করছেন এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আবাদ হবে। কৃষকেরা ধানের দাম ভালো পাওয়ায় নতুন করে জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে। ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। সেচের সুবিধা গুলো আমরা সক্রিয় করেছি। কয়েকবার বৃষ্টিও হয়েছে, সে কারণে কৃষকরা অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে নতুন জায়গায় চাষাবাদ করছেন। সেহেতু এ অঞ্চলে শ্রমিকের সংকট রয়েছে, সে কারণে কৃষি বিভাগ ভর্তুকি মূল্যে রাইসট্রাসপ্লান্টার অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপনের যন্ত্র ভর্তুকি মূল্যে দেয়া হয়েছে। উৎপাদন খরছ কমাতে অনেক স্থানে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপনের কাজ চলছে। যেখানে ১ বিঘা জমিতে হাতে চারা লাগাতে ২০০০ টাকা লাগে। সেখানে ১ বিঘা জমি মাত্র ৫‘শ টাকা খরচে চারা লাগানো যায়। সময় সাশ্রয় হয় এবং উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে যায়। এ পদ্ধতিতে চারা রোপন করলে কৃষকরা লাভবান হবেন। জেলায় বিগত কয়েক বছর থেকে ধানের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা দামও ভাল পাচ্ছেন। যে কারণে বোরো আবাদের জমির পরিমান প্রতি বছর বাড়ছে।
স্থায়ীয় কৃষকরা মনে করেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে ধানের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি তারা উন্নতমানের খুচরা কৃষি যন্ত্রাংশ সুলভ মূল্যে পাওয়ার দাবী করেন।
Developed By Radwan Web Service