সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীরইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮বছর। তাঁর ছোট ভাই পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেনের দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, আজ শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথমজানাজা, সকাল সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ২টায় তাঁর মরদেহ সর্বস্তরেরমানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে নেওয়া হবে এবং পরে দাফনের জন্য মরদেহ সিলেটে নেওয়াহবে। আবুল মাল আবদুল মুহিত লিভার ক্যানসারে ভুগছিলেন। করোনার মধ্যে দেড় বছর আগে এই রোগসম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। গত বছরে করোনায়ও আক্রান্ত হন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বছরের ২৯জুলাই তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। পরে তিনি করোনামুক্ত হয়েবাসায় ফেরেন। এরপর থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ধরনেরশারীরিক ও বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ওপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং অর্থমন্ত্রী আ হম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ও প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ওবিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিসহ আরো অনেকে এই বর্ষীয়ান নেতারমৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বণ্যঢ্য জীবন: আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে। তাঁর বাবার নাম মো. আবদুলহাফিজ এবং মা সৈয়দা শাহার বানু। পঞ্চাশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর করে যুক্তরাষ্ট্রেরহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন মুহিত। ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপিনির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সক্রিয় ছিলেন ভাষা আন্দোলনেও। ১৯৫৬ সালে মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। কূটনীতিকের দায়িত্বে তাকে পাঠানো হয়পাকিস্তানের ওয়াশিংটন দূতাবাসে। একাত্তরের জুন মাসে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতিআনুগত্য প্রদর্শন করেন। ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদবিভাগে সচিবের হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞহিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডিতে। ১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীরদায়িত্বে আসেন মুহিত।দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মুহিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ‘দিন বদলের’ সরকারে অর্থমন্ত্রণালয়ের হাল ধরেন মুহিত। অর্থমন্ত্রী হিসাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেন, যার ১০টি ছিল আওয়ামী লীগসরকারের আমলে। তারস ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে গত নির্বাচনে জয়ী হন ছোট ভাই ড. এ কে আবদুলমোমেন। মুহিত ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পররাজনীতি থেকে অবসর নেন। আবুল মাল আব্দুল মুহিত একজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক ও ভাষাসৈনিক ছিলেন।অর্থমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে সর্বোচ্চ ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী সাবেকআমলা আবদুল মুহিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে৪০টির মতো বই লিখেছেন মুহিত। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুহিতকে২০১৬ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে সরকার। গত মার্চে জন্মভূমি সিলেট আসেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাঁকেগুণিশ্রেষ্ঠ সম্মাননা দেওয়া হয় তখন। জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তৃপ্ত ছিলেন সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। জীবননিয়ে কোনো দুঃখবোধ, আক্ষেপ নেই জানিয়ে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'নো, আইঅ্যাম হ্যাপি। আমি আমার জীবন নিয়ে খুবই তৃপ্ত। জীবনে যা পেয়েছি, দ্যাটস এনাফ।’ নিজের জীবন নিয়ে কোনো দুঃখবোধ আছে কি না―এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘নো, আই অ্যাম হ্যাপি।আমি আমার জীবন নিয়ে খুবই তৃপ্ত। জীবনে যা পেয়েছি, দ্যাটস এনাফ। ৫৪ বছর জনসেবা করেছি, আমিআমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
সম্পাদক: তুহিন আহমদ জহির , কমলগঞ্জ মৌলভীবাজার। মোবাইলঃ-০১৭১৫১৯৫৮১৩
London office:00447417450085 ইমেইল : tuhinpress77@gmail.com web- kbarta.sccmmp.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কমলগঞ্জ বার্তা | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি