কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর মণিপুরি কালচারাল সেন্ট্রারে ভারতীয় মন্ত্রী ও বিধান সভার সদস্যদের উপস্থিতিতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হয়েছে মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় ‘নিঙোল চাকৌবা’ উৎসব। ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মণিপুরি কালাচাল সেন্টারের সভাপতি জয়ন্ত কুমার সিংহের সভাপতিত্বে ও এল সূচনা সিনহা ও প্রেমজিৎ সিংহের সঞ্চালনায় সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসব শুরু হয়। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মণিপুর রাজ্যের খাদ্য ও জনস্বাস্থ্য বিভাগীয় মন্ত্রী লৈশাংথেম সুচিন্দ্র মৈতৈ।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ভারতের মণিপুর রাজ্যের বিধান সভার সদস্য রৈশেম্বা সানাজাওবা, বাংলাদেশের সাবেক অতিরিক্ত সচিব কোংখাম নীলমনি, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী ও পেট্রিওটিক রাইটার্স ফোরাম, মণিপুরের সভাপতি য়াই স্কুল খুয়ালাকপম। উৎসবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রবি কিরণ সিংহ রাজেশ, ইবুংহাল শ্যামল, রাকেশ নাওরেম, অওয়াতোবম সমরেন্দ্র। “নিঙোল চাকৌবা” অনুষ্টানের শুরুতে ৪৮০ জন সম্মিলন অতিথিদের বরন করেন এমসিসি সাধারণ সম্পাদক সমরজিৎ সিংহ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতের মণিপুর রাজ্যের খাদ্য ও জনস্বাস্থ্য বিভাগীয় মন্ত্রী লৈশাংথেম সুচিন্দ্র মৈতৈ বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সৌহাদ্য পূর্ণ সর্ম্পক বিরাজমান। আমাদের দু-দেশের নাগরিকদের মধ্যে সামাজিক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ভাব আদান-প্রধানের মাধ্যমে সেই সম্পর্ক আরো বেশী সু-দৃঢ় করতে হবে।অনুষ্টানে বাংলাদেশের মণিপুরি অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২শত জন ভাই-বোনদের উপস্থিতি ভুরিভোজ ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। আলোচনা শেষে মনোঞ্জ সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে মণিপুরি শিল্পীরা সংগিত পরিবেশন করেন। উল্লেখ্য, “নিঙোল চাকৌবা” আক্ষরিক অর্থে ভাই কর্তৃক বোনকে ভুরিভোজের আমন্ত্রন জানানো হয়। “হিয়াঙ্গৈগী নিনি পানবা” বা বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। এটি মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী একটি জাতীয় উৎসব। ভারতের মণিপুরে ও বাংলাদেশে মণিপুরি অধ্্ূযষিত অঞ্চলে এ উৎসব ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হয়। ভঅইয়েরা তাদের বোনদের ভূরিভোজে আমন্ত্রণ জানায়, খাওয়া দাওয়ার পর ভাইয়েরা বোনদের নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে আশির্বাদ করে। বাংলঅ পঞ্জিকা অনুযায়ী কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। নিঙোল চাকৌবা উৎসবের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী প্রথম শতাবাদীতে রাজত্বকারী মণিপুরি রাজা পাখংবা বিয়ে করেন তার প্রতিদ্বন্ধীপোইলৈতোনের বোন লাইস্নাকে। লাইস্না একবার তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা ভাই পোইরৈতোনকে রাজ প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন করে। তারপর নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে ভাইকে খুশি করে বিদায় জানায়। পোইরৈতোনও আসার সময় বোনের জন্য বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে এসে বোনকে আশির্বাদ করে। এ উপলক্ষে দীর্ঘ বিরতির পর ভাই বোনের সম্মিলন ঘটে এবয় সম্প্রীতি স্থাপিত হয়। বাংলাদেশে নিঙোল চাকৌবা পারিত হলেও খুব ব্যাপক আকার পায়নি কখনও। এবার বৃহস্পতিবার আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স, পেট্রিওটিক রাইটার্স ফোরাম, মণিপুর এবং মণিপুরি ইয়ূথ ফোরাম বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে ব্যাপক আয়োজনে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়।
Developed By Radwan Web Service